সিলেট বিভাগের অন্যতম প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা মৌলভীবাজার চায়ের রাজধানী এবং পর্যটন শিল্পে সমৃদ্ধ একটি জেলা। এ জেলায় উৎপাদিত খাদ্য নিজেদের চাহিদা পুরণ করে দুই তৃতীয়াংশ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের চাহিদা পুরণে অবদান রাখছে। অথচ দীর্ঘ বছর যাবত এই জেলা ছিলো বি ক্যাটাগরির অন্তর্ভূক্ত।
২০০৪ সালে মৌলভীবাজার এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হওয়ার প্রস্তাবটি মন্ত্রী পরিষদে পাস হয় যেটা অনেকেরই অজানা ছিল। কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছরেও তা গ্যাজেটভুক্ত করা হয়নি। মন্ত্রী পরিষদে ফাইলটি ১৬ বছর ধরে বন্দি থাকে এবং মৌলভীবাজার এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হওয়ার আমাদের স্বপ্নটা অধরাই থেকে যায়। বিগত ১৬ বছর থেকে কেউই এ বিষয়ে নিজ উদ্দ্যোগে অগ্রসর হয়ে জেলার এ কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হোননি। ২০১৯ সালে সংসদ সদস্য মনোনীত হওয়ার পর আমার প্রথম লক্ষ্যই ছিলো মৌলভীবাজারকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা। কারন জেলাকে এ গ্রেডের অন্তর্ভূক্ত না করা হলে মেডিকেল কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় বড় সকল প্রকল্প থেকে জেলা বরাবরের মতই বঞ্চিত থেকে যাবে যার জন্য সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে জেলাকে এ গ্রেডে অন্তর্ভূক্তকরন এবং সেই লক্ষ্যে মৌলভীবাজারকে এ ক্যাটাগরিভুক্ত করার জন্যে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের শেষের দিকে মৌলভীবাজার জেলায় আরো একটি উপজেলা হিসেবে কমলগঞ্জের ওসমানগড়কে জেলার আরেকটি উপজেলা হিসেবে বৃদ্ধি করার প্রস্তাবটি মহান জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে উপস্থাপন করি। কিন্তু জেলায় আরেকটি উপজেলা বৃদ্ধি করে মৌলভীবাজারকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা কাজটি ছিল তুলনামূলক কঠিন এবং অতি দীর্ঘমেয়াদী। তাই আমি বিকল্প পথের সন্ধানে থাকি এবং মন্ত্রণালয়ে আমার নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ চালিয়ে যাই। একপর্যায়ে আমি সচিবালয় থেকে জানতে পারি যে মৌলভীবাজার জেলা এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হওয়ার প্রস্তাবটি ২০০৪ সালে মন্ত্রী পরিষদে পাস হয়েছিলো। কিন্তু প্রস্তাবটি গ্যাজেট ভুক্ত করা হয়নি।
তখনই আমি মৌলভীবাজার জেলাকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হওয়ার প্রস্তাবিত বিল গ্যাজেটভুক্ত করার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করি। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে মৌলভীবাজার জেলা এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হওয়ার প্রস্তাবিত বিল গ্যাজেট ভুক্ত করতে সক্ষম হই। যার ফলে এখন মৌলভীবাজার জেলা এ ক্যাটাগরির জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় জেলার বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ দাবী তুলতে পারবে এবং সেগুলো বাস্তবায়নে সক্ষম হবে।
মৌলভীবাজার জেলাকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করার প্রস্তাবিত পাস বিল গ্যাজেটভুক্ত করতে সচিবালয়ে বারংবার ধরনা দিয়েছি। আর এতে আমাকে সহযোগিতা করেছে আমার ছোট ভাই লন্ডন প্রবাসী জহিরুল ইসলাম। তার মাধ্যমে আমি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব জনাব মোঃ শফিউল আলম সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করি। তিনি তার পরিচিত ছিলেন। শফিউল আলম সাহেব কাজটি করে দেবেন বলে আস্বস্ত করে অবসরে চলে গেলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ পান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। আমি উনার সাথে সাক্ষাৎ করে মৌলভীবাজারকে এ ক্যাটাগরিতে পাস হওয়ার বিলটা গ্যাজেটভুক্ত করার বিষয়ে কথা বলি। তিনি বলেন ‘স্যার ফাইলটি উপরে রেখে গেছেন। আমি এই কাজটি সম্পন্ন করবো ইনশাআল্লাহ’ । তারপর আল্লাহর রহমতে বের করা হল ২০০৪ সালের এ ক্যাটাগরির পাস হওয়া গ্যাজেটহীন ফাইলটি এবং সম্পন্ন হলো মৌলভীবাজার জেলাকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করার গ্যাজেটটি।
মৌলভীবাজার জেলাকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করার পাস হওয়া বিল গ্যাজেট ভুক্ত করায় অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই আমার নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মোঃ শফিউল আলম সাহেবকে এবং মুখ্য সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে। এছাড়াও এ কাজে সহযোগিতাকারী সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দীন
সংসদ সদস্য
মহিলা আসন — ৩৬
মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।
Leave a Reply