

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
হিংসা-বিদ্বেষ মানব চরিত্রের অত্যন্ত নিন্দনীয় অভ্যাস। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে বিষময় করে তুলে। হিংসুক ব্যক্তি কখনোই সৎচরিত্র হতে পারে না। যেসকল মন্দ চরিত্র ও স্বভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হল হিংসা। হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যক্তির মধ্যে গর্ব-অহংকার, পরশ্রীকাতরতা, শত্রুতা, অন্যের অনিষ্ট কামনা করা ইত্যাদি কু-চিন্তার মনোভাব থাকে। বর্তমান সমাজে একে অন্যের প্রতি হিংসা-প্রতিহিংসার পরিমাণটা বেড়ে গেছে। সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন সংগঠনের মতানৈক্য ও একে অন্যের প্রতি বিরূপ হিংসা-বিদ্বেষ।মানুষকে কত অধ্যাপতনে নিয়ে যায় তার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। হিংসুক ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবে যে তাদের কেউ ভালো দৃষ্টিতে দেখে না, সবার মাঝে তার প্রতি একটা খারাপ ধারণা জন্ম নেয়। সমাজে সবার সাথে বসবাস করলেও মানুষের মনে তার স্থান নেই। ফলে পরিবারের ছোট সদস্যরাও হিংসুতে হয়ে উঠে।
হিংসা বিদ্বেষ সম্পর্কে নবীজি (সা.) সতর্ক করে বলেছেন, ‘তোমরা অন্যের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে বেঁচে থাকবে, কেননা এমন ধারণা জগণ্য মিথ্যা। আর কখনও কারও দোষ অনুসন্ধান করবে না, কারও গোপন বিষয় অন্বেষণ করবে না, একে অন্যকে ধোকা দেবে না, পরস্পরকে হিংসা করবে না, বরং তোমরা সবাই এক আল্লাহর বান্দা হিসেবে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে থাকবে (বুখারি: ৬০৭৬. মুসলিম: ৬৬৯০)। কোন কারনে কারও প্রতি শত্রুতাভাবাপন্নতা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ধরে রাখার নাম হচ্ছে বিদ্বেষ। একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার বিষয়টি বদ-অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। নানা কারণে একে অন্যের প্রতি অন্য ব্যক্তির প্রতি হিংসা বিদ্বেষ প্রকাশ পায়। এতে মানুষের মনোমালিন্য, ঝগড়া, দ্বন্দ্ব উদ্ভব ঘটে। হিংসুতে ব্যক্তি সাধারণত পরচর্চা ও পরনিন্দা করতে খুব ভালোবাসে। এরা নিজেদের ভুলত্রুটি, লোভ, হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার ইত্যাদি কু-চিন্তা গুণগুল্যে দেখতে পায় না, অন্যের দোষগুলো দেখতে পায়, এরা অন্যের দুঃখে মনে মনে আনন্দিত হয়, এরা অযথা মানুষকে সন্দেহ করে। অন্য একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির গুণাহ মাফ হয় না, তন্মধ্যে একজন হচ্ছে অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষকারী’। অতঃপর হিংসা-বিদ্বেষ থেকে আমাদের নিজেদের, পরিবারের ও সমাজকে বাঁচিয়ে তুলতে হলে অপরের সব বিষয়ে মাথা ঘামানো বাদ দিতে হবে। যে কোন পরিস্থিতিতে আপনি চাইলে একটু অন্যভাবে গ্রহণ করতে পারেন। প্রত্যেকের পরিস্থিতি ভিন্ন তা নিজেকে মানতে হবে। অপরের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণের পূর্বে ঠান্ডা মাথায় নিজেকে ভাবুন, নিজে কি ভাবছেন পাশাপাশী অন্য লোকে কী ভাবছে সেটাও ভাবতে হবে। আপনী যাকে প্রতিযোগী মনে করছেন তিনি হয়ত আপনাকে শুভাকাঙ্ক্ষী ভাবছেন। তাই অযথা হিংসা-বিদ্বেষ চিন্তাকে মন থেকে মুছে ফেলুন। হিংসা পরায়ণ মানুষকে আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন না। আসুন আমরা দলমত নির্বিশেষে আমাদের আত্মাকে হিংসা থেকে পরিশুদ্ধ করি। আমাদের সমাজটাকে গড়ে তুলি হিংসামুক্ত। পরিশেষে বলতে চাই হিংসা-বিদ্বেষ আমাদরে মনকে দূষিত ও কলুষিত করে। মহান আল্লাহ আমাদের এই সব গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে ইহকাল ও পরকালে শান্তি দান করেন। আমিন।
প্রবন্ধকার ও লেখক :
মোঃ ফরিদ আহমেদ মিয়া
এমএসএস(ইকোনমিক),বিএড,এমএড
সহকারি শিক্ষক
কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়
Leave a Reply