

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সময়ের স্রোতে বিশ্ব ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে আর সেই সঙ্গে শিক্ষার রুপরেখাও। বর্তমান সময়ে তথ্য প্রযুক্তির সান্নিধ্যে থেকে বাস্তবধর্মী হাতে কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যে শিক্ষা অর্জন তা হলো কারিগরি শিক্ষা ,আবার প্রশিক্ষণার্থী নিদিষ্ট কাজের ব্যবহারিক জ্ঞান,দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জনে যে শিক্ষা সহায়তা করে তাকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা বলে । কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে বর্তমানে জীবিকা অর্জনের একটি মাধ্যম হিসেবে গন্য করা হচ্ছে । উভয়ই শিক্ষাই কর্মসংস্থানমূখী শিক্ষা যা ব্যক্তির বাস্তব সমস্যা সমাধানের উপযোগি করে তৈরি করা হয়। বিপুল জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষা হচ্ছে একমাত্র শক্তিশালী হাতিয়ার। কারন প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি ও কাঠামোগত দুর্বলতার কারনে ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থীদের অনেকেই কর্ম জীবনের জন্য দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠছে না । আবার কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত একজন ব্যক্তি দেশে বিদেশে চাকুরির সংস্থান করে নিতে পারে ,তেমনি আত্নকর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে নিতে পারে ।বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ জনশক্তির প্রবল অভাব রয়েছে। যা মানব সম্পদ তৈরির অন্যতম চ্যালেঞ্জ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক পেশা বিভিন্ন খাত যেমন,চিকিৎসা ক্ষেত্রে নার্সিং,ল্যাব টেকনিশিয়ান,প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং,ডেটা এন্ট্রি,রন্ধনশিল্প ,গ্রাফিক আর্টস ও ডিজাইন ইত্যাদি খাত সমুহে দক্ষ জনশক্তির শূন্যতা পরিলক্ষিত । এ খাত গুলোর শিক্ষায় শিক্ষিত লোকেরা বেকারত্বের অভিশাপ হতে মুক্ত থেকে জীবনকে কর্মচঞ্চল রাখে ও দক্ষতা ভিত্তিক কর্মসংস্থানে প্রবেশ করে প্রতিযোগিয়ায় টিকে থাকে আয় বৃদ্ধির মাধমে সম্পদ অর্জন করে। বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণ না করার কারনে যে শিক্ষক হলে ভালো হতো সে হয়তো হয়েছে সৈনিক,যার ডাক্তার হওয়ার কথা, হয়েছে আইন ব্যবসায়ী। উদ্দেশ্যহীন শিক্ষা গ্রহণ করে প্রথমে কেবল সার্টফিকেট সংগ্রহের কাজ চলে তারপর যেমনটি জোটাতে পারলো সেটিই তার বৃত্তি বা পেশা। ফলে জাতি দক্ষ পেশাজীবি জনবল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে দেশে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষা গ্রহনরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ শতাংশ অথচ জাপানে এ ধরনের শিক্ষার শিক্ষিত জনবল ৬0 শতাংশ,দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪০ শতাংশ,মালয়েশিয়ায় ৪২ শতাংশ। এখানে মালয়েশিয়ার দিকে তাকালে দেখতে পারি,দেশটির স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি উন্নত ছিল না। তখন আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল দ্বিগুন,অথচ বর্তমানে তাদের মাথাপিছু আয় ১২-১৪ গুন বেশি। তা সম্ভব হয়েছে এই কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে তাদের সরকার সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলে। এদিকে বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার র্যাকিংয়ে ১৪9 টি দেশের মধ্যে ১১৪ তম। কারিগরিতেঁ দক্ষ ও পরিশ্রমিরা নিজেকে আত্ননির্ভরশীল ও স্বাবলম্বি করে তুলে নিজেই উদ্যোত্তা হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে অন্যের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। অজ্ঞতা ও বৈষম্যের কারনে অনেকে এই শিক্ষার প্রতি ভীতি কাজ করে। তবে ব্যক্তি বা সমাজের অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বির জন্য এ শিক্ষার সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। দেশের দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান, আত্ন কর্মসংস্থান ,উন্নয়ন,উদ্যোত্তা,উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বেকারত্ব দূরীকরণে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। পরিশেষে বলা যায়,কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ছাড়া অধিক জনশক্তিকে জনসম্পদে রুপান্তর করা অসম্ভব।
প্রবন্ধকার ও লেখকঃ
মো: ফরিদ আহমেদ মিয়া
এমএসএস(ইকোনমিক),বিএড
সহকারী শিক্ষক(আইসিটি)
কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়
মুন্সীবাজার, কমলগঞ্জ,মৌলভীবাজার।
Leave a Reply