

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পিন্টু দেবনাথ, সাংবাদিকতা জগতে এক উজ্জ্বল নাম। তিনি কেবল একজন সংবাদ সংগ্রাহক নন, বরং একজন নির্ভীক কলম সৈনিক হিসেবে পরিচিত, যিনি তার দীর্ঘ কর্মজীবনে সততা, পেশাদারিত্ব এবং মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সমাজের প্রতিটি স্তরে, বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র এলাকার সমস্যা সম্ভাবনা তুলে ধরতে তার নিরলস প্রচেষ্টা তাকে অনন্য করে তুলেছে।
কর্মজীবনের শুরু এবং বিকাশ :
পিন্টু দেবনাথের সাংবাদিকতা জীবনের শুরু হয়েছিল স্থানীয় সংবাদপত্র দিয়ে। ধীরে ধীরে তার মেধা ও পেশাদারিত্ব তাকে জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমে নিয়ে আসে। তিনি বিভিন্ন সময়ে দেশের স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকা কাজ করেছেন, যেখানে তিনি রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ :
পিন্টু দেবনাথ বিশেষ করে তার অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য সুপরিচিত। তিনি ঝুঁকি নিয়ে দুর্নীতির খবর, পরিবেশ বিপর্যয়ের চিত্র এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সামনে এনেছেন। তার কলম ছিল সমাজের দুর্বল ও বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর। বিভিন্ন সময়ে তার সাহসী প্রতিবেদনগুলো সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তা পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
মানবিকতার সাংবাদিক :
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পিন্টু দেবনাথ তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্যও প্রশংসিত। তিনি প্রায়শই এমন সব বিষয় নিয়ে কাজ করেন, যা সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট এবং সংগ্রামের গল্প তুলে ধরে। তার লেখায় মানবজীবনের গভীরতা এবং সংবেদনশীলতা ফুটে ওঠে, যা পাঠককে শুধু তথ্যই দেয় না, বরং তাদের মনে দাগ কেটে যায়। তিনি বিশ্বাস করেন, একজন সাংবাদিকের কাজ শুধু খবর দেওয়া নয়, বরং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে মানবিক মূল্যবোধকে তুলে ধরা।
পুরস্কার ও সম্মাননা :
সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা থেকে পুরস্কৃত ও সম্মানিত হয়েছেন। এই সম্মাননাগুলো তার পেশাদারিত্ব এবং সততারই স্বীকৃতি। তবে তিনি মনে করেন, সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো মানুষের আস্থা এবং ভালোবাসা।
পিন্টু দেবনাথের কর্মজীবন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের তরুণ প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তার সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র হলো, সত্যের প্রতি অবিচল থাকা, পেশাদারিত্ব বজায় রাখা এবং মানবতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। তার জীবন ও কাজ থেকে আমরা শিখতে পারি যে, একজন সাংবাদিকের কলম হতে পারে সমাজের পরিবর্তনের এক শক্তিশালী হাতিয়ার।
সাংবাদিক পিন্টু দেবনাথের অনেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন রয়েছে, তবে তার কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ নিচে তুলে ধরা হলো:
১. পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিষয়ক প্রতিবেদন:
পিন্টু দেবনাথ মূলত কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এলাকায় কাজ করেন। এই অঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। তিনি বন্যপ্রাণীর অবৈধ শিকার, বনভূমি ধ্বংস, পাহাড় কাটা, এবং জলাভূমি ভরাটের মতো পরিবেশগত অপরাধ নিয়ে বহু প্রতিবেদন লিখেছেন। এসব প্রতিবেদন স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহায়ক হয়েছে।
২. প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রা ও মানবাধিকার:
তিনি চা বাগানের শ্রমিক, আদিবাসী সম্প্রদায় এবং গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে অসংখ্য মানবিক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। এসব প্রতিবেদনে তাদের দুঃখ-দুর্দশা, অধিকার বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা এবং সরকারি সহায়তার অভাবের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তার এই কাজগুলো সমাজের দুর্বল জনগোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতি তৈরি করতে এবং তাদের জন্য নীতিগত পরিবর্তন আনতে সহায়ক হয়েছে।
৩. সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান:
এছাড়া, তিনি এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো নিয়েও অনেক ফিচার লিখেছেন। এর মাধ্যমে তিনি স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন, যা পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তার এই ধরনের বিশেষ প্রতিবেদনগুলো কেবল তথ্য পরিবেশন করে না, বরং সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত করে।
সাংবাদিক পিন্টু দেবনাথের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ নিয়ে অসংখ্য প্রতিবেদন রয়েছে। এর মধ্যে একটি বিশেষ প্রতিবেদন হলো “কমলগঞ্জ- শ্রীমঙ্গল সড়কে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া”।
কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে মোহিত কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল
এই প্রতিবেদনটি মূলত প্রকৃতির সৌন্দর্য নিয়ে লেখা একটি ফিচার। পিন্টু দেবনাথ তার লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন কীভাবে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের দু’পাশে থাকা সবুজ চা বাগানের সঙ্গে কৃষ্ণচূড়া ফুলের লাল রঙ এক অনবদ্য দৃশ্যের অবতারণা করেছে। তিনি বর্ণনা করেছেন, কীভাবে রাস্তার পাশে, গাছের ডালে এবং এমনকি রাস্তায় ঝরে পড়া ফুলগুলো প্রকৃতির এক অপরূপ চিত্র তৈরি করে।
প্রতিবেদনে পিন্টু দেবনাথ কৃষ্ণচূড়াকে ‘গ্রীষ্মের রাজা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন যে, যখন গ্রীষ্মের খরতাপে প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে ওঠে, তখন কৃষ্ণচূড়ার উজ্জ্বল লাল রঙ যেন এক নতুন জীবন ও প্রাণবন্ততা নিয়ে আসে। তার এই লেখা শুধু কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যের বর্ণনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এটি বাঙালির কাব্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে এই ফুলের গুরুত্ব তুলে ধরেছে।
কেন এই প্রতিবেদনটি বিশেষ?
দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা: এটি একটি সাধারণ সংবাদ প্রতিবেদন নয়, বরং একটি ফিচার যা সাংবাদিকের মানবিক ও নান্দনিক দৃষ্টিকোণ তুলে ধরে।
প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা: পিন্টু দেবনাথের এই লেখা তার নিজ অঞ্চলের প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রতিফলন।
জনপ্রিয়তা: এই ধরনের প্রকৃতি-ভিত্তিক ফিচারগুলো স্থানীয় পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে, যা পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়।
এই প্রতিবেদনটি প্রমাণ করে যে, একজন সাংবাদিক কেবল রাজনৈতিক বা সামাজিক সমস্যা নিয়েই লেখেন না, বরং চারপাশের সৌন্দর্য এবং মানবিক আবেগ নিয়েও লিখতে পারেন।
সাংবাদিক পিন্টু দেবনাথ তার সাংবাদিকতা জীবনের জন্য সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিলে, ইন্টারন্যাশনাল টেলিভিশন চ্যানেল ইউরোপ লিমিটেড যুক্তরাজ্য কার্যালয়ে প্রতিনিধি সম্মেলনে তাকে এনটিভি নিউজ ডিপার্টমেন্ট’স চয়েজ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এটি তার প্রতিদিনের সংবাদ সংগ্রহের কাজের স্বীকৃতি ছিল।
এই পুরস্কারের পাশাপাশি, তাকে কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব ও কমলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি কর্তৃক একটি সম্মাননা স্মারকও প্রদান করা হয়। এই সম্মাননা তার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের পেশাদারিত্ব এবং সততার স্বীকৃতি।
এই সম্মাননাগুলো প্রমাণ করে যে, স্থানীয় পর্যায়ে সাংবাদিক হিসেবে তার কাজ এবং অবদান বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি নিজেই তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। তিনি পরিবেশগত অপরাধ, ভূমি দখল এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখেছেন। তার সাংবাদিকতার মূল ভিত্তিই হলো সততা ও পেশাদারিত্ব।
উপলব্ধ তথ্য অনুযায়ী, সাংবাদিক পিন্টু দেবনাথের কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় না। তার কর্মজীবনের বিবরণ এবং বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন।
সাংবাদিকতা পেশায় সাধারণত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা এড়িয়ে চলা হয়, কারণ নিরপেক্ষতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা একজন সাংবাদিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিন্টু দেবনাথের প্রতিবেদনগুলো থেকে দেখা যায়, তিনি বিভিন্ন সামাজিক, পরিবেশগত এবং দুর্নীতির বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন, যা কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা সমর্থন করে না।
সাংবাদিক পিন্টু দেবনাথের আরেকটি পেশা হলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি “কমলকুঁড়ি” নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই পত্রিকাটি আজও সুনামের সাথে প্রকাশিত হচ্ছে।
অর্থাৎ, তিনি শুধু একজন সংবাদ কর্মী হিসেবেই নন, বরং একজন গণমাধ্যম উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করছেন। এটি তার সাংবাদিকতা পেশারই একটি সম্প্রসারিত দিক।
বর্তমান দায়িত্ব: তিনি বর্তমানে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
এনটিভি (ইউরোপ): এই আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেলের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রতিনিধি।
দৈনিক আমার বার্তা: এই জাতীয় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও তিনি কাজ করেন।
এছাড়া দৈনিক বাংলাদেশ টুডে পত্রিকার কমলগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি এবং সিলেটের আঞ্চলিক দৈনিক কাজিরবাজার পত্রিকার মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি হিসাবে কর্মরত আছেন।
কমলকুঁড়ি পত্রিকা: ২০১১ সাল থেকে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই পত্রিকাটি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে আজও প্রকাশিত হচ্ছে।
রিপোর্টার্স ইউনিটি, কমলগঞ্জ: তিনি এই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রেসক্লাবের সাথেও জড়িত।
সাংবাদিকতার ধরন: পিন্টু দেবনাথ মূলত একজন অনুসন্ধানী ও ফিচার সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। তার লেখালেখিতে উঠে আসে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি, দুর্নীতি, পরিবেশগত সমস্যা এবং প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রা। তিনি চা বাগানের শ্রমিক, আদিবাসী সম্প্রদায় এবং গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে অসংখ্য মানবিক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তার লেখনীতে স্থানীয় প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক স্থানের প্রতিও গভীর ভালোবাসা ফুটে ওঠে।
কর্মজীবনের শুরু: পিন্টু দেবনাথের সাংবাদিকতা জীবনের শুরু হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। তিনি মৌলভীবাজার থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক “পাতাকুঁড়ির দেশ” পত্রিকার মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। প্রথম দিকে শখের বশে সাহিত্য চর্চা করলেও, পরে এটি তার পেশায় পরিণত হয়।
Leave a Reply