নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইংরেজি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার ৫নং কালাপুর ইউনিয়ন এর ২নং ওয়ার্ডের আলী নগর গ্রামে বসবাস করেন শারিরীক প্রতিবন্ধী মায়া রাণী শীল, তাঁর পায়ে সমস্যা থাকায় তাঁর জীবন হয়ে উঠে কষ্টের।
এক অসুস্থ বৃদ্ধ মা আছেন তাঁর ভাঙা নীড়ে। মায়া রাণী শীল একজন প্রতিবন্ধী, বিয়ে হয়নি তাঁর, বৃদ্ধ মা কে নিয়েই মায়া রাণীর সংসার। প্রতিবন্ধী ভাতা দিচ্ছেন বাংলাদেশ সরকার। এতে করে কি করে চলবে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা সহ দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির বাজারে তাঁর প্রতিবন্ধী জীবনের এই চোট্ট সংসার। কোন মতে খেয়ে না খেয়েই নকশীকাঁথা শেলাই করে চালিয়ে যাচ্ছেন মায়া রাণী শীলের সংসার। মা তাঁর এই জীবনে পারেননি প্রতিবন্ধী মায়া রাণী শীলের সকল আশা পূর্ণ করতে। কিন্তু হাত পাতেননি কখনো কারো কাছে। মায়া রাণী ও ঠিক মায়ের মতই তিনি নিজে প্রতিবন্ধী হয়ে কারো কাছে হাত না পেতে কাঁথা শেলাই করে চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর জীবন। কে শুনবে মায়া রাণীদের কথা? আপনার দুইটা বেনসনের দামে মিটে যায় মায়া রাণীদের এক বেলা পেটের ক্ষুধা। আপনার দুই প্যাকেট বেনসনের দামে পূর্ণ হতে পারে মায়া রাণীদের একটা অনেক দিনের ভালো স্বপ্ন। মায়া রাণী ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ও পূর্ণ করতে পারেন না তাঁর একটা চোট্ট স্বপ্ন! তিনি চান তাঁর প্রতিবেশীদের ভালো রাখতে নিজেও ভালো থাকতে কিন্তু হয়ে উঠে না তাঁর ঋণের চাপে!প্রতি বছরের মতো এবার ও তিনি সাহস করে স্হানীয় এন, জি, ও ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেন মাত্র চার হাজার টাকা। তিনি জানেন না কি ভাবে কিস্তিতে পরিশোধ করবেন এ ঋণ। তিনি একটা স্বপ্ন নিয়েই ঋণ গ্রহণ করেন প্রতি বছর। তাঁর অভাবের কারণেই হাত খরচ ও অন্য ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে পূর্ণ হয় না তাঁর সেই ছোট একটা স্বপ্ন! প্রতিবারের মতো এবার ও সম্ভব হচ্ছে না! তিনি তাঁর বেঁচে যাওয়া সামান্য কিছু অর্থ সহ তাঁর এক প্রতিবেশী কে নিয়ে আসেন স্থানীয় ভৈরবগঞ্জ বাজারের এক স্যানিটারী দোকানে কিছু রিং ও একটি স্লাভ ক্রয় করে তার পরিবার ও প্রতিবেশীদেরকে একটা পরিবেশ বান্ধব সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতে। দুঃখের বিষয় হলো এতো কম অর্থে কোন ভাবেই তার স্বপ্ন পূরণ হওয়ার নয়! এক টাকা কম হলে যেখানে কোন দোকানে একটা পন্যসামগ্রিই পাওয়া যায় না সেখানে তাঁর নিরাশার আগুন জ্বলে উঠা ছাড়া অন্য কোন পথও ছিলো না। তাঁর প্রতিবেশী কে কষ্ট দেওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বাজারের একটি চা স্টলে চা পান করতে নিয়ে আসেন। সেখানে তাঁর এক আত্মীয়র সাথে দেখা হয়, মায়া রাণী শীল সেই আত্মীয় কে ও চা পানের নিমন্ত্রণ জানিয়ে চা চক্র শুরু হয়।
কথায় কথায় চলে আসে মায়া রাণী শীল এর স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার বেদনা, বলতে বলতে প্রায় কেঁদেই ফেলেন মায়া রাণী শীল। কি করে হবে যেখানে এক টাকা ও কম নেবেন না কোন দোকানী, পারলে তো গলাকাটা ব্যবসা করেন তারা আমার মতো গরীবদের সাথে। মায়া রাণী চাইলেন চায়ের বিল পরিশোধ করতে তাঁর আত্মীয় তাঁকে তা করতে না দিয়ে তিনি তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন দেখি আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারি কি না।
তিনি শরণাপন্ন হলেন স্থানীয় জে, টি গ্রুপের সত্ত্বাধিকারী,বাংলাদেশ কবি মহলের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ছড়াকার বিশিষ্ট কবি শেখ শাহ্ জামাল আহমদের। পূর্ণ ঘটনা খুলে বল্লেন। তখন মায়া রাণী শীল আসেননি সাথে কারণ তাঁর ধারণা- আমিতো কত জনের কাছেই গেলাম কিন্তু কেউ শুনেনি আজও আমার মতো মায়া রাণীদের কথা।
মায়া রাণী শীল কে ডেকে এনে কবি প্রশ্ন করলেন, সরকার তো প্রতিটি ঘরে ঘরে অসহায় পরিবারের জন্য পরিবেশ বান্ধব স্যানেটারী ল্যাট্রিন বিতরণ করে থাকেন আপনি পাননি কেন?আর আমিতো এলাকার কোন চেয়ারম্যান, মেম্বার ও নয় যে আপনাকে সরকারি অনুদান প্রদান করবো? তিনি বলেন আমি কত মেম্বার চেয়ারম্যান সাহেবদের কাছে কতবার গিয়েছি কেউ শোনেননি আমার কথা। আমাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হয় তাই আর কোন ধরনের সহযোগিতা আমি সরকার থেকে পাবো না।সব কথা শুনে – জে, টি গ্রুপের সত্বাধিকারী কবি শেখ জামাল তাঁর স্বপ্ন পূরণ করে দিয়েছেন,কবি বলেন – তার পর আমি যে দৃশ্য দেখেছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো কোন ভাষা নেই। আপনিও যদি এমন আনন্দময় কান্নার দৃশ্য দেখতে চান তা হলে আজই আপনার প্রতিবেশী মায়া রাণীদের পাশে দাড়ান তা হলেই কেবল বুঝতে পারবেন তাঁদের দুঃখ বেদনা। আপনার সামান্য সহযোগিতায় পূর্ণ হতে পারে তাঁদের সারা জীবনের ছোট একটি স্বপ্ন, আপনিও হাসি ফুটাতে পারেন তাদের মুখে।
Leave a Reply