কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে আলোচিত রেখা বেগম (২০) কে হত্যার অভিযোগে তার সাবেক স্বামী রিয়াজ উদ্দিন (২২) কে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে কুলাউড়া থানা পুলিশ। ৩০ মার্চ শনিবার রাতে শনিবার ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের কাছে ও আদালতে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে ঘাতক রিয়াজ। এর আগে রেখার বাবা রুহুল আমিন বাদী হয়ে রিয়াজ ও তাঁর বাবা সেলিম মিয়াকে (৫৮) আসামি করে কুলাউড়া থানায় হত্যা মামলা করেন।
হত্যা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রিয়াজ উদ্দিন মাদক সেবন করে প্রায়ই স্ত্রীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। এ অবস্থায় প্রায় তিন মাস আগে স্থানীয়ভাবে সালিস হয়। সালিসে রিয়াজ স্ত্রীকে তালাকের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সময় দেনমোহর হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দেন। ২৭ মার্চ রেখা ছাড়া বাড়িতে পরিবারের অন্য কোনো সদস্য ছিলেন না। এ সময় আশপাশের কিছু লোক রিয়াজের সঙ্গে রেখাকে জঙ্গলের দিকে হেঁটে যেতে দেখেন। এর পর থেকে তাঁদের খোঁজ মিলছিল না। ২৯ দুপুরে বাড়ির কাছে নয়াবাগান এলাকায় গহিন জঙ্গলে সুপারি গাছের সঙ্গে ওড়না দিয়ে বাঁধা অবস্থায় রেখার লাশ মিলে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
রিয়াজের টিক নিয়ে আলোচনা- অবশ্যই আমি প্রতিশোধ নিবো। তবে সেটা ভিন্ন ভাবে এবং ভয়ঙ্কর রূপে। এমন কথা লিখে টিকটক বানায় কুলাউড়া উপজেলা বরমচালে সংঘটিত ভয়ঙ্কর হত্যাকান্ড স্বামী পরিত্যাক্তা গৃহবধু রেখার সাবেক স্বামী রিয়াজ উদ্দিন। যা নিয়ে এলাকায় চলছে তোলপাড়। ফলে রেখা হত্যাকান্ডের সাথে তার বিচ্ছেদ হওয়া স্বামী রিয়াজ উদ্দিন জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
বরমচাল ইউনিয়নের পশ্চিম সিংগুর (নয়া বাগান) এলাকার লোকজন জানান, এই রিয়াজ সত্যি একজন ভয়ঙ্কর মানুষ। ৫ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সে হাজতবাসও করেছে। রিয়াজ উদ্দিনের সাথে একবছর আগে বিয়ে হয় একই গ্রামের রেখা বেগমের। ৩ মাস আগে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। গত বুধবার ২৭ মার্চ দুপুরে রিয়াজ ও রেখাকে একসাথে দেখেন এলাকার লোকজন। বিবাহ বিচ্ছেদের পর রিয়াজ মুলত ঢাকায় থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিয়াজের ভাইরাল হওয়া টিকটক যে রেখা বেগমকে উদ্দেশ্য করে তৈরি করেছে এবং তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে তার টিকটকের বাস্তবায়ন হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান।
নিহত রেখা বেগমের পিতা রুহুল আমিন জানান, বুধবার রেখার সাথে তার আগের স্বামী রিয়াজকে এক সাথে দেখতে পান। ওইদিন থেকে রেখা নিখোঁজ। আমার মেয়েকে রিয়াজ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। হত্যার পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে জঙ্গলে নিয়ে সুপারি গাছের সাথে বেঁধে রেখেছে। আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। ফাঁসি চাই খুনি রিয়াজের।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রহিম জিবান বলেন, রোববার আদালতে হাজির করা হলে জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াজ বলেছেন, তালাকের পর তাঁর সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে অন্য আরেকজনের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। এটা তিনি মানতে পারছিলেন না। সে জন্য কৌশলে রেখাকে ডেকে বাড়ির পাশের জঙ্গলে নিয়ে ‘আমি না পাইলে আর কেউ পাবে না’ বলে তার গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন। এরপর গাছের সঙ্গে লাশ বেঁধে রেখে আত্মগোপনে চলে যান। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান জেনে শনিবার রাত ১১টার দিকে রিয়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, মনমালিন্যের জের ধরে রিয়াজই হত্যা করেছে তার সাবেক স্ত্রী রেখাকে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও সে দিয়েছে। ঘটনার পর কৌশলে সে এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে পালিয়ে যায়। কিন্তু তার শেষ রক্ষা হয়নি। হত্যাকান্ডের ৩০ ঘন্টার ভিতরে ঘাতককে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে ২৯ মার্চ শুক্রবার রেখা বেগম (২০) নামক এক স্বামী পরিত্যাক্তা গৃহবধুর লাশ সুপারি গাছের সাথে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। রেখা উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের পশ্চিম সিংগুর এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর রুহুল আমিনের মেয়ে। রিয়াজ উদ্দিন একই এলাকার সেলিম মিয়ার ছেলে।
Leave a Reply