কমলগঞ্জ প্রতিনিধি : ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা সোমবার (৩০ নভেম্বর) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে শুরু হয়েছে। দুপুর থেকে রাখাল নৃত্যের মুর্চনায় শুরু হয় রাসোৎসব। করোনাকালীন সময়ে গোটা বিশ্ব স্তব্দ হয়ে আছে। তাই এমন সময়েও যেন রাসের সৌন্দর্য্য মানুষকে মোহিত করে সেই চেষ্টায় মন্ডপে মন্ডপে সব কারুকাজ করা হয়েছে। তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব এবার সীমিত পরিসরে করা হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্যরে মধ্য দিয়ে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ বছর কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড় মন্ডপে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের আয়োজনে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের ১৭৮তম রাস উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। দুপুরে মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে রাস উৎসব।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার), কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান, প্রশাসনের কর্মকর্তা সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।
রাতে জোড়া মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। তুমুল হৈচৈ, আনন্দ উৎসাহ ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার পুরুষ শ্রী কৃষ্ণ ও তার সখি রাধার লীলাকে ঘিরে এই একটি দিন বছরের আর সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে কমলগঞ্জবাসীর জন জীবনে।
অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায় আয়োজন করছে ৩৫ তম পৃথক মহারাস লীলা উৎসব। এখানে পাশাপাশি দুটি স্থানে হচ্ছে রাস উৎসব। এর একটি শ্রী মধুমঙ্গল শর্ম্মার মন্ডপে ও অন্যটি মণিপুরী কালচারেল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে। এখানেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায় আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্ত:স্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।
মাধবপুর ও আদমপুরে রাস উৎসবের আয়োজকরা জানিয়েছেন, মহারাসলীলাল মূল উপস্থাপনা দুপুর থেকে ‘গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য’ এর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। গোষ্ঠলীলায় রাখাল সাজে কৃষ্ণের বালকবেলাকে উপস্থাপন করা হয়। এতে ছিল কৃষ্ণের সখ্য ও বাৎসল্য রসের বিবরণ। গোধূলি পর্যন্ত চলে এ রাখালনৃত্য। রাত ১১টা থেকে পরিবেশিত হবে মধুর রসের নৃত্য বা শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরণ। এই রাসনৃত্য ভোর (ব্রাহ্ম মুহুর্ত) পর্যন্ত চলবে। এই রাসনৃত্যে গোপিনীদের সাথে কৃষ্ণের মধুরলীলাই কথা, গানে ও সুরে ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পীরা।
আদমপুর মণিপুরী মহারাস লীলা উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক চন্দ্রকীতি, মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ ও আদমপুর মহারাস উদযাপন কমিটির নেতা ইবুংহাল সিংহ শ্যামল বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সীমিত পরিসরে ধর্মীয় বিধানমতেই রাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক ও কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুর রহমান বলেন, রাসোৎসবে নিরাপত্তার জন্য দুই জায়গাতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে নিরাপত্তায় পুলিশের তিন স্তরের ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। তবে এবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিাধ মেনে সীমিত পরিসরে ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে মণিপুরী রাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলার অনুমতি দেয়া হয়নি। লোকসমাগম সীমিত করা হবে।
Leave a Reply