নিজস্ব প্রতিবেদক:
—- ইসলামিক ধর্ম দর্শন—-
জন্মঃ
ওলিয়ে কামিল হযরত শাহ্ আজম রহ. ১৮৯৬ সালে ভানুগাছের রামপাশা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ধার্মিক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর সম্মানিত পিতা শেখ মোহাম্মদ ধনাই মিয়া তাঁর মমতাময়ী “মা” হালিমা বিবি।
➤শিক্ষা জীবনঃ
হযরত শাহ্ আজম রহ. তিনি পারিবারিক ভাবে প্রথমে মক্তবী শিক্ষা অর্জন করেন। এরপর তিনি তাঁর বাড়ীর পাশেই প্রাইমারী স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা খুবিই গুরুত্বের সাথে অর্জন করেন।
হযরত শাহ্ আজম রহ. তিনি নিজ উদ্যোগে উচ্চ শিক্ষাও অর্জন করেন।
➤কর্মজীবনঃ
কর্মজীবনে হযরত শাহ্ আজম রহ. তিনি অত্যন্ত ধার্মিক একজন আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তি ছিলেন, চাকুরী নামক পেশায় তিনি তেমন কোন আগ্রহ ছিল না। তাঁর নেশা ছিল মানুষের সেবা করা। আর নিজে আল্লাহ তাআলাকে চিনা এবং মাুনষকেও আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূখী বানানো।এ-ই নেশায় তিনি তাঁর জীবন মিশন শুরু করেন। তিনি দ্বীনি খেদমতে তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ, রাস্তা ঘাট, পুল কালবার্ট নির্মাণ করেন। কমলগঞ্জ উপজেলা ভানু বিল গ্রামে একটি রাস্তা তিনি করে দেন। রাস্তা টি ভাঙ্গা ও বড় ঢর ছিল তৎকালীন সময়ে তিনি রাস্তা মাঝে প্রচুর পরিমান মাটি এনে ভরাট করে রাস্তাটি যাতায়াতের উপযুক্ত করে দেন। বর্তমানে এলাকা বাসী সকল মিলে রাস্তা টির নামকরণ করেন ভানু বিল হজরত শাহ আজম রহ. রোড। এবং বকশি টিলা মাজার ও মসজিদের ওয়াল বন্দী বা বাউনঢরী তিনি করেন দেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের গয়গড় গ্রামে ১৪৭৬ ইংরেজী সালে জংলাবৃত্ত ভগ্নস্তূপ ঐতিহাসিক খোজার মসজিদ সংস্করণ করা, মসজিদটি জংলা স্তুপে ছিল তিনি বাহির করেন, বর্তমানে এলাকাবাসী মিলে খোজার মসজিদটি ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়। ঐতিহাসিক খোজার মসজিদটি দেখার জন্য বহু দূরদূরান্ত থেকে অনেক মুসল্লীগণ আসেন। পাশে আছে সুবিশাল কবরস্থান। মসজিদের ভিতরে আছে ওয়ালে লেখা শিলালিপিতে কারুকার্যময়। আজ পযর্ন্ত কি লেখা আছে কেউই সঠিক ভাবে পড়তে পারেননা। ওয়ালে আছে বাঘের তাবা। মসজিদের পাশেই আছে ছোট একটি পুকুর ওলিয়ে কামিল পুকুরটি খনন করান পুকুরে কই,মাগুর মাছ ছিল।এবং মসজিদের গম্বুজ তৈরী করেন, পাশ্ববর্তী মৌলভীবাজার খালিশপুর গ্রামে আড়াই কেদার জমির উপর গদ্দীবাড়ী স্হাপন করে তরিকায়ে কাদেরিয়া খানকাহ্ ও গদ্দীমোবারক প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমান এখানে প্রতি বৃহস্পতিবার জিকির আজকার ও খাস দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ-ই খানকাহ যে জায়গাটি আছে সমস্ত জায়গাহ্ বড় পীর আবদুল কাদির জিলানী রহ. এর নামে তিনি ওয়াকফ করে দেন। নিকটবর্তী সরাপুর সরা পুর গ্রামে ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সফর সঙ্গী হজরত শাহ ফাত্তাহ্ রহ. মাজার সংস্করণ ও মাজারের পাশেই একটি ফুরকানীয়া মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন। যাতে এলাকা ছোট ছোট বাচ্চারা মক্তবী শিক্ষা অর্জন করতে পারে। সেখানে একটি পুকুর ও খনন করেন যাতে লোকজনের সুবির্ধাথে জিয়ারতকারী ও মক্তবেরর ছাত্ররা ওজু করতে পারেন। নিকটবর্তী গোড়াখাল গ্রামে ৩৬০আউলিয়ার অন্যতম ওলি হাজী রসুল রহ. এর মাজার শরীফ সংস্করণ ও মাজার সংলগ্ন জিয়ারতকারীদের ওজু করার সুবির্ধাথে একটি পুকুর খনন করান। কমলগঞ্জ উপজেলার কাঠাল কান্দি গ্রামে মরহুম আবদুল লতিফ সাহেবের জমির উপর একটি ফুরকানীয়া মক্তব প্রতিষ্ঠা করে মক্তবটি তিনি নিজ অর্থে পরিচালনা করেন। আদমপুর এলাকার ভানুবীল গ্রামে গভীর জলাশয়ের মধ্যে মাটি ভরাট করে দীর্ঘ রাস্তা নিমার্ণ করেন। জাঙ্গালিয়া গ্রামে মোকামটিলায় কবরস্থান ও জানাযার মাঠের উন্নয়ন সহ হযরত শাহ্ ইয়াবাদশাহ্ রহ. এর অজ্ঞাত মাজারটি সন্ধান বাহির করেন এবং উপরের ঘাট পাকা করেন ওযু করার সুবিধার্থে।
ভারত কৈলা শহর তাঁর মুর্শিদ হযরত মাওলানা শাহ্ ইয়াসিন রহ. এর মাজার শরীফ সংস্কার ও মাজার সংলগ্ন ঘাট পাকা কোরআন যিয়ারতকারীর সুবিধার্থের জন্য।
নোয়াখালী জেলার নন্দনপুর তাঁর দাদা মুর্শিদ হযরত মাওলানা খলিলুর রহমান নন্দনপুরী রহ. সাহেব বাড়ীর সম্মুখে বিরাট একটি খানকাহ্ ঘর নির্মাণ করেন। আরো
তিনটি ঘরের জন্য টিন ক্রয় করে দেন। কমলগঞ্জের ভানুগাছে তাঁর নিজ স্হান, কুমড়া কাপন গ্রামে তাঁর বড় বোনের বাড়িতে হজরত কলীম শাহ্ রহ.ও হযরত ইসমাইল শাহ্ রহ. নামক দুইজন সন্মানিত ওলির কবরস্থান ওয়ালবন্দী এবং গেইট নির্মাণ করেন।এছাড়াও তিনি বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব,খানকাহ্, মুসল্লীগন ওজু করার সুবির্ধাথে পুকুর খনন সহ সিলেট বিভাগের অনেক সাদাকাহে জারিয়া মূলক কাজ করেন।
➤সাংসারিক জীবনঃ
উল্লেখ করা আবশ্যক যে ওলিয়ে কামিল হযরত শাহ্ আজম রহ. ১৮৯৬ ইং সনে জন্ম গ্রহন করে মাত্র ৩৩ বছর সাংসারিক জীবন অতিবাহিত করে ১৯২৯ ইং সান হইতে সংসার ত্যাগী অবস্থায় তিনি বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ শুরু করেন। এ হিসেবে দেখার যায় পীর ছাহেবের সাংসার ত্যাগী জিবীন ৫০ বছর। সুদীর্ঘ ৫০ বছরই দ্বীনের জন্য মেহনত করেন। তিনি ২ ছেলে ও ১ মেয়ে। তাঁর বড় ছেলের নাম মোহাম্মদ আছরব উল্লাহ, ২য় ছেলে নাম মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোশাররফ আলী। এক-মেয়ে ছিল। তার নাম ছিল আছতরী বিবি।কেউই আজ এ-ই পৃথিবীতে নাই।
➤তাঁর ইবাদত বন্দেগী ও তাকওয়াঃ
ওলিয়ে কামিল হযরত শাহ্ আজম রহ. ছিলেন খুবি সহজ সরল প্রকৃতির অসাধারণ লোক।তিনি খুবি ধার্মিক ও আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তি ছিলেন। সব সময় তিনি আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণে ধ্যানে খেয়ালে রাখেন এটা তার অভ্যাস ও স্বভাব ছিল। তিনি যখন আল্লাহ আল্লাহ বলে শ্বাস টান দিতেন তখন মনে হতো এনে ফেনী তিনি আর তার মাঝে নেই শ্বাস টান দেওয়ার পর ৪০,৪৫ মিনিট তিনি স্তব্ধ থাকতেন। তিনি নিরব থাকতেন তার মাবুদকে তিনি খুবই মহাব্বাতের সাথে স্মরণ করতেন। মনে হতো তিনি আর দুনিয়া থেকে ইন্তেকাল করেছেন এমন ভাবে তিনি আল্লাহ তায়াকে ইয়াদ করতেন। তার জবানে শুধু আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহ শব্দের জিকির অবিরাম চলতো। সাথে সাথে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহাব্বত তিনি অন্তরে লালন করতেন আর মনে মনে শুধু পড়তেন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। যখন তার সাথে তার কোন ভক্তবৃন্দ আশেকান থাকতেন তিনি যখন জিকির করতেন মনে হতো তার এই জিকিরে আল্লাহ তায়ালাকে দেখছেন এত মহব্বত নিয়েই তিনি জিকির আজকার করতেন। এই কথা ভক্তবৃন্দ আশেকানগন বলতেন। আল্লাহ তায়ালাকে পাওয়ার জন্য তিনি ঘরবাড়ি সংসার তাহলে আমাকে গুরুত্ব না দিয়ে তিনি মাওলার সন্তুষ্টি সব সময় তিনি চেয়েছেন পরিবার-পরিজনকে কোন সময় তিনি দুনিয়ার মুহাব্বাত তাকে আকৃষ্ট করতে পারে নাই তিনি সব সময় আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিভাবে খুশি ও সন্তুষ্ট রাখা যায় এই এই ধ্যানে তিনি তার জীবন পরিচালনা করেছেন এবং তার ভক্তবৃন্দ, আশেকানগণকে ও এভাবে পরিচালনা করেছেন।
➤বাইয়াত ও ইজাজতঃ
হযরত শাহ্ আজম রহ. ভারত কৈলাশহর নির্বাসী পীরে কামেল বিশিষ্ট কবি হযরত আল্লামা শাহ্ ইয়াছিন রহ. নিকট তিনি বাইয়াত গ্রহন করেন। হযরত মাওলানা শাহ্ ইয়াছিন রহ. একজন মরমী কবি,সাধক ও গবেষক ছিলেন। তিনি কুরআন ও হাদিসের আলোকে শত শত কবিতা রচনা করেছেন। তাঁর এই কবিতা গুলো পান্ডুলিপি হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। হযরত আল্লামা শাহ্ ইয়াসিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর একমাত্র খলিফা হযরত শাহ্ আজম রহ.। তিনি অন্য কেউকে খেলাফতি দান করেন নি।
হযরত শাহ আজম রহ. এর দাদা পীর ছাহেব হলেন,নোয়াখালী জেলার লক্ষ্মীপুর নিবাসী ওলিয়ে কামিল হযরত মাওলানা শাহ খলিলুর রহমান নন্দনপরী ছাহেব রহ. ।
➤হযরত শাহ্ আজম রহ. মাজার শরীফঃ
পীরে কামেল হযরত শাহ আজম রহ. মাজার শরীফ অবস্থিত মৌলভীবাজার বাজার জেলার কমলগঞ্জ পৌরসভার ০৮ নং ওয়ার্ডে রামপাশা আংশিক গ্রামে।
➤তাঁর নামানুসারে দ্বীনি প্রতিষ্ঠানঃ
মৌলভীবাজার জেলায় মুস্তফাপুর ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী গয়গড় গ্রামে ঐতিহাসিক গয়গড় খোজার মসজিদ সংলগ্ন হযরত শাহ্ আজম রহ. ও হযরত হাসান আলী হাফিজি মাদ্রাসা ও কমলগঞ্জ উপজেলায় হযরত শাহ আজম রহ দরগাহ্ শরীফ সংলগ্ন হযরত শাহ আজম রহ দারগাহ্ জামে মসজিদ, হযরত শাহ্ আজম রহ.হিফজুল কুরআন দরগাহ্ মডেল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। আদমপুরের ভানুবীল গ্রামে তাঁর নামানুসারে একটি রোডে নামকরণ করা হয়। প্রতিদিন এ-ই রোডে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছে। সাদাকাহে জারিয়া মূলক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশ ও প্রবাসীদের আন্তরিক দোয়া ও সাহায্য সহযোগিতায় কার্যক্রম চালছে।
➤জীবনীগ্রন্থ রচনাঃ
পীরে কামিল হযরত শাহ্ আজম রহ .এর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি জীবনীগ্রন্থ রচনার কাজ চলছে। এ-ই কাজটি শুরু করেছিলেন হযরত শাহ্ আজম রহ সুযোগ্য নাতি আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী ছাহেব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনিও আজ এ-ই পৃথিবীতে নেই। তিনিই জীবনীগ্রন্থ টির তথ্য সংগ্রহ,কারামত গুলো সুন্দর করে সাজিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ গ্রন্থটির পান্ডুলিপির কাজ চলছে। সকলে খাস দোয়া করলে ইনশাআল্লাহ গ্রন্থটি অচিরেই প্রকাশিত হবে। যদি কারো কোন প্রকার ঘটনা জানা থাকে তবে আমাদেরকে এ-ই নাম্বারে 01611816603 সহযোগিতা করতে পারেন।
➤মৌলভীবাজার খালিশপুরে গদ্দীবাড়ী নির্মাণঃ
পীরে কামিল হযরত শাহ্ আজম রহ. তিনি মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় খালিশপুরে হযরত বড় পীর আবদুল কাদির জিলানী রহ. নামানুসারে গদ্দীবাড়ী ও জিকির আজকারের জন্য খানকাহ্ ঘর নির্মাণ করেন।
হযরত শাহ্ আজম রহ. তিনি গদ্দিবাড়ীতে তাঁর দাদা পীর হযরত আল্লামা শাহ্ খলিলুর রহমান নন্দনপুরী ছাহেব রহ. নামে দারায়ে খলিলিয়া নামে একটি ঘর নির্মাণ করেন। হযরত শাহ্ আজম রহ. তাঁর জীবদ্দশায় প্রতি বছর এ-ই গদ্দীবাড়ীতে পবিত্র কুরআন শরীফের খতম, জিকির আজকার, ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল করাতেন।
এ-ই বাড়ী সমস্ত জায়গায় বা সম্পদ ( প্রায় আড়াই কেদার) হযরত বড়পীর আবদুল কাদির জিলানী রহ. নামে হযরত শাহ্ আজম রহ. ওয়াকফ করে দেন। হযরত শাহ্ আজম রহ. তিনি একজন দুনিয়া বিমুখ আল্লাহ তাআলার ওলি ছিলেন।কারণ তিনি জীবিত থাকতে তাঁর জন্য কিছুই করেন না। আল্লাহ তাআলা কে কিভাবে সন্তুষ্টি করা যায় এ-ই মনে নিয়েই দ্বীনের কাজ করতেন।।
➤ইন্তেকাল°
ওলিয়ে কামিল হযরত শাহ্ আজম রহ. এ-ই অস্থায়ী দুনিয়া থেকে তিনি ১৩৮৬ বাংলা ২৯ শ্রাবন ( রামাদান) মাসে দুনিয়ার সফর শেষ করে তাঁর মালিকের ডাকে সারা দেন। আল্লাহ তাআলা যেন তাঁর বান্দার সকল ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম নসিব করেন।
লেখকঃ আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মূফতী শাহ্ মোহাম্মদ মোশাহিদ আলী আজমী ছাহেব রহ.
Leave a Reply