কুলাউড়া প্রতিনিধি ঃ
কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নে পরিবারের সম্পত্তি থেকে ৪ বোনকে বাদ দিয়ে জাল উত্তরাধিকারী সনদ তৈরি করে ৫ শতক জমি বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে দুই ভাই, দলিল লেখক ও জমির ক্রেতাদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এলাকায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ইটাহরি গ্রামের বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ আহমদ চৌধুরী মারা যাওয়ায় তাঁর তেজ্যবিত্তে উত্তরাধিকারী হোন রইছউজ্জামান চৌধুরী, সমছুজ্জামান চৌধুরী, মকবুলউজ্জামান চৌধুরী, রেজিয়া বেগম চৌধুরী, রফিয়া বেগম চৌধুরী, সফিয়া বেগম চৌধুরী, রিবা বেগম চৌধুরী। পরবর্তীতে রইছউজ্জামান চৌধুরী অবিবাহিত অবস্থায় মারা গেলে তার তেজ্যবিত্তে সকল ভাই-বোন সম্পত্তির মালিক হোন। কিন্তু গত ৭ এপ্রিল পৃথিমপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম জিমিউর রহমান চৌধুরী ফুল মিয়া ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সেলিম আহমদ চৌধুরীর স্বাক্ষর জাল করে মৃত মোহাম্মদ আহমদের পুত্র সমছুজ্জামান ও মকবুলউজ্জামান কে উত্তরাধিকারী দেখিয়ে দলিল লেখক আব্দুল মতিন ও দলের ক্রেতা মসুদ আহমদ চৌধুরী এবং ছবুরা বেগমের স্বামী আব্দুর রহিম ওরফে নাইওর একটি জাল উত্তরাধিকারী সনদ তৈরি করেন বলে জানা গেছে। গত ১২ এপ্রিল ২৪৮৪ দলিল মূলে ২ শতক জমি আব্দুর রহিম চৌধুরীর স্ত্রী ছবুরা বেগমের নামে ও ২৪৮৫ দলিল মূলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মসুদ আহমদের নামে ৩ শতক জমি দলিল রেজিস্টি করা হয়। এ কারণে ২৪৮৪/২২ নং দলিল সৃষ্টি হওয়ায় মোঃ ফজলুল করিম চৌধুরীর স্বত্ত্বে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এই উত্তরাধিকারী সার্টিফিকেটটি পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে প্রদান করা হয়নি বলে জানান চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মেম্বার। চেয়ারম্যান-মেম্বারের স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া স্বাক্ষর দিয়ে উত্তরাধিকারী সনদ সৃষ্টি করা হয়।
২৪৮৪ নং দলিলে জমির দাবিদার ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ১৩০২ দাগে ৭ শতক জমি রয়েছে আমার। কিন্তু সেই দাগ থেকে ২ শতক জমি ছবুরা বেগমের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। আমি জাল সনদ দিয়ে তৈরি হওয়া দলিল বাতিল ও আমার স্বত্ত্ব ফিরে পেতে চাই।
জমির ক্রেতা ছবুরা বেগমের স্বামী আব্দুর রহিম চৌধুরী বলেন, জাল উত্তরাধিকারী সনদের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। সমছুজ্জামান ও মকবুলউজ্জামান দুই ভাই মিলে তাদের সাড়ে তিন শতক জমি থেকে ২ শতক জমি ৫০ হাজার টাকা মূল্যে আমার স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রি করে দেন।
জমির আরেক ক্রেতা মসুদ আহমদ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে থাকায় তাঁর বক্তব্যে নেয়া সম্ভব হয়নি।
জমির বিক্রেতা সমছুজ্জামানের ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্যে নেয়া সম্ভব হয়নি।
জমির অংশীদার রফিয়া বেগম চৌধুরী ও তাঁর স্বামী সৈয়দ হুমায়ুন বলেন, তাদের ৪ বোনকে সম্পত্তির মালিকানা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে অন্যায়ভাবে। সম্পত্তি থেকে যার যা প্রাপ্য তা তাকে দেয়া হবে এটাই নিয়ম। বিষয়টি তারা স্থানীয় ইউপি’র চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন। রেজিস্ট্রিকৃত দলিলটি বাতিলের দাবি জানান তারা।
দলিল লেখক মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, আমাকে উত্তরাধিকারী সনদ এনে দেন মসুদ আহমদ চৌধুরী। পরে আমি ছবুরা বেগমের নামে ২ শতক ও মসুদ আহমদের নামে ৩ শতক জমির দলিল সম্পাদন করি। পরে জানতে পারি উত্তরাধিকারী সনদটি জাল ছিলো। জাল সনদ জানতে পারলে কি দলিল করতাম। তাছাড়া ওই পরিবারে কতজন ভাই বোন রয়েছে সেটা আমার জানার কথা না। জাল সনদ তৈরি করে জমি রেজিস্ট্রি করেই লন্ডনে চলে যান মসুদ আহমদ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সেলিম আহমদ চৌধুরী বলেন, সমছুজ্জামান ও মকবুলউজ্জামান দুই ভাইয়ের কাছ থেকে লিখিত নেয়া হয়েছে। জাল সনদ তৈরিতে দুই ভাই মসুদ আহমদকে দায়ী করছেন। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
পৃথিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান এম জিমিউর রহমান চৌধুরী ফুল মিয়া বলেন, উভয়পক্ষকে নিয়ে খুব দ্রুত আমার কার্যালয়ে শুনানী করা হবে। তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
Leave a Reply