মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ঃ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে একই দিনে পৃথক ঘটনায় বন্যপ্রাণী রেসকিউ সেন্টারের কাছে বিদ্যুতায়িত হয়ে একটি মুখপুড়া হনুমান ও দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় একটি উল্টো লেজি বানরের মৃত্যু হয়েছে।বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণী রেসকিউ সেন্টারের অদূরে চলমান ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়ে একটি মুখপুড়া হনুমান তার ২ দিনের একটি বাচ্চা রেখে রাস্তার পাশে মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। একই সময়ে রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় একটি উল্টো লেজি বানর মারা যায়।ঘটনার খবর পেয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মীর্জা মেহেদী সারোয়ার দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে মৃত দুটি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেন। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুটি প্রাণীকে মাটি চাপা দেন। আর মুখপুড়া হনুমানের বাচ্চাটিকে বন্যপ্রাণী রেসকিউ সেন্টারের সেবা কেন্দ্রে নিয়ে যান।বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মীর্জা মেহেদী সারোয়ার জানান, ঘটনাস্থলে এসে এ দুটি মৃত বন্যপ্রাণীকে দেখে তিনি কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, এ বনের প্রাণী রক্ষায় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। আজ (বৃহস্পতিবার) বন্যপ্রাণী দিবসও পালনসহ বেশ কিছু সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করেছেন। আর একই দিনে বিকেলে বনের ভেতর দুটি প্রাণীর মৃত্যু হলো। এটা তিনি মেনে নিতে পারছেন না।বনের ভেতর পৃথক দুর্ঘটনায় হনুমান ও বানরের মৃত্যু তিনি আরো বলেন, বার বার পল্লী বিদ্যুৎকে বলার পরও ৩৩ হাজার কেভির উপর প্লাষ্টিক কাভার লাগানো যায়নি। তিনি আবারও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়টি আবারও গুরুত্বের দেখার অনুরোধ করবেন। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাভার লাগানো না হয় তাহলে বন্যপ্রাণী রক্ষা খুব দায় হয়ে পড়বে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মুখপুড়া হনুমানের ২ দিনের একটি বাচ্চা কোলে নিয়ে দীর্ঘ সময় তিনি বনে ছিলেন এবং কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, এই বাচ্চাটা কিভাবে বাঁচানো যাবে তা নিয়ে চিন্তায় আছেন। যেভাবে বড় হওয়ার কথা এই বাচ্চাটি সেভাবে বড় হতে পারবে না, তার মায়ের বুকে দুধ ও গাছে গাছে লাফিয়ে খাবার সংগ্রহ করা সেটা আমরা কিভাবে করবো বুজতে পারছি না। এই বাচ্চাটা বনে রাখা সম্ভব হবে না। যদিও আমরা এটাকে বাঁচাতে পারি, সেটা গৃহপালিত হয়ে রাখতে পারবো এর মধ্যে বন্যতা সৃষ্টি হবে না।তিনি আরও বলেন, বনের ভিতর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুত লাইনে প্লাষ্টিক কাবার লাগানোর বিষয়টা জানানো হয় একাধিকবার তারপরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এটি এখন বন্যপ্রাণীদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে একাধিক চিঠি দিয়েছেন। বন্যপ্রাণী রক্ষায় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছেন। এরই মাঝে একই সময়ে একসঙ্গে দুটি প্রাণীর মৃত্যু বড় কষ্টের।
Leave a Reply